টাঙ্গাইল শহরের প্যারাডাইসপাড়া এলাকার ষাটোর্ধ নাজমা বেগম। তারা ভাইবোনেরা ছোট থেকে বড় হয়েছেন এ শহরেই। সন্তানদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার মাধ্যমে বড় করেছেন; কিন্তু মায়েদের পা ধুয়ে সন্তানরা যে ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারে তিনি তা কখনো দেখেননি।
তবে সন্তানরা তার পা না ধুয়ে দিলেও তার নাতনি সানফা বিনতে হাসান তার পা ধুয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করায় তিনি আবেগে আপ্লুত হয়েছেন। শুধু তিনি নন, তার মতো শতাধিক অভিভাবককে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সন্তানরা পা ধুয়ে গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়ায় আবেগে আপ্লুত তারা।
মঙ্গলবার শহরের এসপি পার্কে হাতেখড়ি প্রি-প্রাইমারি স্কুল ৫ম বারের মতো ভিন্ন আঙ্গিকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপনের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সরোয়ার আলম।
হাতেখড়ি প্রি-প্রাইমারি স্কুলের উপদেষ্টা ও টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইল পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী জাকেরুল মওলা, রাইট ফেয়ারের চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ সাথী।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাতেখড়ি প্রি-প্রাইমারি স্কুলের চেয়ারম্যান নওশাদ রানা সানভী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন স্কুলের শিক্ষিকা জান্নাত জিরিয়া খান ছোঁয়া।
সকাল থেকে মা-বাবার হাত ধরে শিক্ষার্থীরা পার্কে উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয় অনুষ্ঠানস্থল। পার্কে সারিবদ্ধ হয়ে বসেন মায়েরা। তাদের সন্তানেরা মগে পানি নিয়ে একসঙ্গে দেড় শতাধিক মায়ের পা ধুয়ে ভালোবাসা প্রকাশ করেন এবং ভালোবাসার স্লোগান সংবলিত মায়ের গলায় মেডেল পরিয়ে দেয় শিশুরা।
এমন ভালোবাসা পেয়ে শিশুদের জড়িয়ে ধরে আবেগে আপ্লুত হন মায়েরা। ভালোবাসা দিবসের এরকম অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শিশুরা আনন্দে মেতে উঠে।
আয়োজক কমিটি জানায়, মা, বাবা ও অভিভাবকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৫ম বারের মতো এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিশু বয়সে নৈতিক শিক্ষা অর্জন না হলে বড় হয়ে এ শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব না। ফলে অনেক সময় বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের শেষ আশ্রয়স্থল হতে পারে বৃদ্ধাশ্রম। এ ভাবনা থেকেই শিশুদের নৈতিক শিক্ষা বাড়াতে শিশুদের দিয়ে মায়ের পা ধুয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয়। ভালোবাসা দিবসের দিনটি সাজানো হয়েছিল শিশুদের নিয়ে।
অভিভাবক শান্তা বেগম বলেন, সন্তানের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পাব কখনো কল্পনা করিনি। শিশুদের ছোট থেকে যা শেখানো হবে, বড় হয়ে তারা তা অনুসরণ করবে। স্কুলের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এ রকম অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছোট থেকে মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে উদ্বুদ্ধ হবে।
অপরজন নাহিদ সুলতানা বলেন, এ অনুষ্ঠান থেকে সন্তান ও অভিভাবকরা অনেক কিছুই শিখতে পারবে। সন্তানের কাছে যেমন পিতা মাতা প্রিয়, ঠিক তেমনি পিতামাতার কাছে সন্তান খুবই প্রিয়। ভালোবাসা দিবসে এটি একটি ব্যতিক্রম ধর্মী অনুষ্ঠান। এ অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।
শিশু নীলাদ্রি খান বলে- আমি মায়ের পা ধুয়ে দিয়েছি। মাকে মেডেল পরিয়ে দিয়েছি। আমার খুব ভালো লাগছে।
মুগ্ধ অপর শিশু বলে, আমি মাকে অনেক ভালোবাসি। মা যখন অফিসে থাকে আমি খুব মিস করি। আজকে মাকে সারাদিন পেয়েছি। মায়ের পা ধুয়ে দিয়েছি। এখানে সব বন্ধুরা অনেক মজা করেছি। টিচার আমাদের মজার মজার অনেক চকলেট উপহার দিয়েছেন।
হাতেখড়ি প্রি-প্রাইমারি স্কুলের চেয়ারম্যান নওশাদ রানা সানভী বলেন, আমরা মনে করি ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসা পাওয়ার প্রথম ভাগিদার মা-বাবা। যদিও তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের কোনো বিশেষ দিন প্রয়োজন হয় না। বিশেষ এই দিনে শিশুদের মনে বাবা-মায়ের প্রতি অটুট ভালোবাসা এনে দিতেই এই আয়োজন করে থাকি। আমরা প্রতিটি শিশুকে শিখিয়ে থাকি বড় হয়ে ভালো মানুষ হতে হবে এবং নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। যাতে করে বৃদ্ধকালে বাবা মাকে আর বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। শিশুরা তাদের মায়ের পা ধুয়ে সম্মান দেখিয়ে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এমন অনুষ্ঠান আমি প্রথম দেখলাম। এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন আয়োজন করার জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করা হবে।