গতকাল ছিল পহেলা ফাল্গুন, আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আর এই দিবস দুটি উদযাপনে ফুলের কথা আসে সবার আগে। প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই রঙবেরঙের ফুল। তবে বাজারে ফুলের দাম চড়া। ফাগুনের আগমনী খবরে যেন বাজারে আগুন লেগেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফুলের চাহিদা কমেছে। এ সময়ে গোলাপের চাহিদা থাকে বেশি। গোলাপ এখন আর ১০/২০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফুলের দাম বাড়ায় একটি গোলাপ বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে। এমনটা কখনও হয়নি। অন্যান্য ফুলের দামও গতবারের চেয়ে বেশি।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঢাকা মহানগর পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার শাহবাগে গেলে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। যত সময় গড়াচ্ছে দোকানে তত ভিড় বাড়ছে। অধিকাংশ ক্রেতাই তরুণ-তরুণী।
রাজধানীর মিরপুর থেকে শাহবাগে ফুল কিনতে এসেছেন তিন বান্ধবী। মনিকা, অনামিকা ও তানজিলা। তারা এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরে পছন্দের ফুল বেছে নিচ্ছেন। তারা তিন জনই সেজেছেন ফুলে ফুলে। কারো গলায় ফুলের মালা, কেউ চুলের খোঁপায়, হাতে ফুল দিয়ে সেজেছেন। তাদের একজন তানজিনা বলেন, এখানে অনেক ধরনের ফুল পাওয়া যায়। ফুলের সমাহার দেখতে ভালো লাগে। সেটা মিরপুরে নেই। এখানে ফুলের দামটা একটু বেশি মনে হলো। তাছাড়া একসঙ্গে ঘোরার একটা বিষয় আছে। এখানে পাশেই বইমেলা। সেখানে যাবো।
শাহবাগে ফুল কিনতে আসা তরুণ দম্পতি অহনা ও তানজিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একেক দোকানে একেক দাম বলছে। যে ফুলটি আমি ৭০ টাকায় কিনেছি, সেটি অন্য দোকানে ১০০ টাকার কমে দিচ্ছে না। দাম একটু বেশি হলেও নিতে হবে। যেহেতু এখন প্রয়োজন।
শাহবাগে অহনা ফুল কুটিরের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জসিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গতকাল বিকাল থেকেই বিক্রি বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও বাড়ছে। আজ সকাল থেকে আগামীকাল রাত পর্যন্ত ২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করি। এবার ফুলের দাম একটু বেশি। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে ফুল কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রিও করতে হচ্ছে একটু বেশি দামে।
শাহবাগের মালঞ্চ পুষ্পকেন্দ্রের মালিক শেখ সালেহ আহম্মেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগের মতো ব্যবসা নেই। করোনার পর থেকে ক্রেতার সংখ্যা যে কমেছে আর বাড়েনি। গতবারের চেয়ে এবার ফুলের চাহিদা কম। অর্থনৈতিক মন্দার জন্য ফুলের বাজারে চাহিদা কমেছে। ৭ ফেব্রুয়ারি রোজ ডে গেলো, ফুল তেমন বিক্রি হয়নি। গত বছর এমন দিনে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এবার ৩০ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারিনি।
যে গোলাপ বাগান থেকে ৫ থেকে ১০ টাকায় কিনেছি, বিক্রি করেছি ২০ থেকে ৩০ টাকা—এবার সেটি কিনতে হচ্ছে ৩০ টাকায়, বিক্রি করতে হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। ফুলের এই দাম শুনে অনেক ক্রেতা রাগ করে চলে যাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ী সালেহ আহম্মেদ।
শাহবাগ ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অন্যান্য বছরের মতোই এবার ফুল বিক্রি ভালো হবে আশা করি। এক লাখ লোকও যদি ফুল কিনতে আসে তাহলে কেউও ফিরে যাবে না—আমাদের তেমন প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ব্যবসা কেমন হচ্ছে তা আরও কিছু সময় গেলে বোঝা যাবে। দুই দিনে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট আমাদের।
দাম বেশির কারণ জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, এবার বাগান মালিকরা ফুলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন—এ জন্য আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত বছর দোকানিরা একটি গোলাপ বাগান থেকে ৮ টাকায় কিনে ৩০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বিষয়টি বাগান মালিকরা লক্ষ করেছেন—তাই এবার তারা একটি গোলাপ ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। তাদের নির্ধারিত দামেই আমাদের কিনতে হচ্ছে।