BD Prime News
ঢাকাFriday , 10 February 2023
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আইন আদালত
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম
  6. খেলা
  7. জাতীয়
  8. বাণিজ্য
  9. বাংলাদেশ
  10. বিনোদন
  11. বিশেষ সংবাদ
  12. রাজনীতি
  13. শিক্ষা
  14. সারাদেশ
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভুল করে ভুল রেলস্টেশনে নেমে যাওয়া শিশুটি যেভাবে উদ্ধার হলো

Link Copied!

সুরাইয়ার বয়স খুব বেশি হলে আট বছর। তাকে ট্রেনের দরজার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছিল। একটি ব্যাগ হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় সে। দরজার কাছে না দাঁড়িয়ে ট্রেন থেকে নেমে যায় সুরাইয়া।

ঘটনা যখন নজরে আসে, তখন ট্রেনটি চলতে শুরু করে। ট্রেনের মধ্যে থাকা তার দুই বয়োবৃদ্ধ অভিভাবক মাসুদুর রহমান-রিজিয়া রহমান দম্পতি বুঝতে পারছিলেন না, তাঁরা কী করবেন!

ট্রেনের একই বগিতে ছিলেন মিনারা খাতুন নামের এক যাত্রী। তিনি এগিয়ে আসেন। দ্রুত জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) ফোন দেন তিনি। তারপর অল্প সময়ের মধ্যে সুরাইয়াকে রেলস্টেশন থেকে উদ্ধার করা হয়।

গত বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। স্বজন সুরাইয়াকে সঙ্গে নিয়ে মাসুদুর-রিজিয়ারা দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে দিনাজপুর থেকে নাটোরে যাচ্ছিলেন। পথে নওগাঁর আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ রেলস্টেশনে ভুল করে নেমে গিয়েছিল সুরাইয়া।

সুরাইয়ার মা–বাবা থাকেন ঠাকুরগাঁওয়ে। তাঁরা রিজিয়ার দিকের আত্মীয়। মাসুদুর-রিজিয়া দম্পতি থাকেন দিনাজপুরে। তাঁদের ছেলে থাকেন নাটোরে। সুরাইয়াকে তার মা–বাবা মাসুদুর-রিজিয়া দম্পতির কাছে রেখেছেন। সে মূলত এই দম্পতির সঙ্গেই থাকে।

সুরাইয়াকে অল্প সময়ের মধ্যে নিরাপদে ফিরে পেয়ে মাসুদুর-রিজিয়াদের মুখে হাসি ফুটেছে। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন দেওয়া মিনারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আর শিশুটিকে উদ্ধারে সহায়তা করতে পেরে ৯৯৯ নম্বর–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও খুশি। সবার এক কথা, সরকারের এই সেবা থাকার কারণেই সুরাইয়াকে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

সুরাইয়াকে উদ্ধারের তথ্য জানিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ অফিসার আনোয়ার সাত্তার গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান। পরে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়।

আনোয়ার সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, ৯৯৯ নম্বরে দিনে গড়ে ২০ হাজার কল আসে। এসব কলের মধ্যে জরুরি সেবাসংক্রান্ত বিষয় যেমন থাকে, তেমনি থাকে অপ্রয়োজনীয় ইস্যুও। জরুরি সেবাসংক্রান্ত নানান বিষয়ের মধ্য থেকে তাঁরা বাছাই করা কিছু ঘটনা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গণমাধ্যমকে জানান। সুরাইয়াকে উদ্ধারের ঘটনাটিও তেমন।

আনোয়ার সাত্তার বলেন, ‘মেয়েটি উদ্ধার হয়েছে, শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বস্তি পেয়েছি। কল পাওয়ার পর আমরা মেয়েটিকে উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সহায়তা চাই। তারাও দ্রুত সাড়া দেয়। সবার দ্রুত তৎপরতায় মেয়েটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তা না হলে মেয়েটি অন্যত্র চলে যেতে পারত। মেয়েটি বিপদে পড়তে পারত।’

গতকাল রাতে রিজিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় প্রথম আলোর। ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘লোকাল ট্রেন, অনেক ভিড় ছিল। আমাদের তিনজনের হাতেই ব্যাগ ছিল। নাটোরে নামতে যাতে আমাদের অসুবিধা না হয়, সে জন্য আমরা একটু এগিয়ে দরজার কাছাকাছি থাকতে চেয়েছিলাম। সুরাইয়া ছোট মানুষ। নওগাঁর আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ স্টেশনে ট্রেন থামতেই সে নেমে যায়। আমরা যখন দেখি, ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দেয়।

কী করব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমাদের বিপদ দেখে ট্রেনে থাকা একটি মেয়ে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে। মেয়েটি আমাদের জানায়, সে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেছে। আমরা এই সেবা সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না। আমরা আমাদের গন্তব্য নাটোর স্টেশনে নামতে নামতেই জানতে পারি, সুরাইয়াকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে নিরাপদে আছে।’

রিজিয়া বলেন, ‘সুরাইয়াকে না পাওয়া গেলে আমরা বড় বিপদে পড়তাম। আমরা আমাদের ছেলের বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমাদের বেড়ানোর সব আনন্দ মাটি হয়ে যেত। সুরাইয়ার বয়স কম। ও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কান্নাকাটিও করেছে। এখন আমাদের সবার মধ্যে স্বস্তি কাজ করছে। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

সুরাইয়াকে উদ্ধারে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়া মিনারা থাকেন ঢাকায়। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রজেক্টের কাজ সম্প্রতি শেষ করেছেন।

মিনারা বলেন, তিনি গতকালই প্রথম ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন। প্রথম ফোনে একটি শিশুকে উদ্ধারের ঘটনায় তিনি খুবই আপ্লুত। ৯৯৯ নম্বর সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনিও।

ঘটনা সম্পর্কে মিনারা বলেন, ‘আমি ট্রেনের বগিতে জানালার কাছে বসেছিলাম। প্রথমে ঘটনা বুঝতে পারিনি। আমার পাশের এক যাত্রী এসে বললেন, ছোট একটি মেয়ে স্টেশনে নেমে গেছে। মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য কেউ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছিলেন না। মেয়েটির দুই বৃদ্ধ অভিভাবক তখন খুব অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন। আমি এগিয়ে যাই। ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে তাঁদের শান্ত হতে বলি।’

মিনারা বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মেয়েটির জন্য খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। পরে আমাকে ৯৯৯ নম্বর থেকে জানানো হয়, মেয়েটিকে পাওয়া গেছে। বৃদ্ধ দম্পতিও এই খবর আমাকে নিশ্চিত করেছেন। খবরটি শুনে আমার কী যে ভালো লেগেছে!’

মিনারা জানান, একবার তাঁর এক বন্ধুর ভাই ও মা ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন। ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে তাঁরা সহায়তা পেয়েছিলেন। সেই ঘটনাটি তাঁর জানা ছিল বলেই তিনি চট করে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়েছিলেন।

মিনারার ফোনটি ধরেছিলেন ৯৯৯ নম্বরে কর্মরত কল টেকার কনস্টেবল রুবেনা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কলটি পাওয়ার পরই তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় মেয়েটিকে উদ্ধারের জন্য বলেন। আত্রাই থানার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন।

রুবেনা বলেন, ‘মেয়েটিকে নিরাপদে উদ্ধার করার খবরটি জেনে আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ, আমিও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম’ উদ্ধারের পর সুরাইয়াকে আত্রাই থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে সুরাইয়াকে নিয়ে নাটোরের বাসায় ফেরেন মাসুদুর-রিজিয়ার ছেলে এস এম এইচ আহমেদ বখতিয়ার। তিনি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। বখতিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুধবার ট্রেনে করে আমার নাটোরের বাসায় আসছিলেন মা–বাবা।

সঙ্গে ছিল সুরাইয়া। ভুল করে ট্রেন থেকে তার নেমে যাওয়ার ঘটনা আমি ফোনে জানতে পারি। পরে সে উদ্ধার হলে আমি আত্রাই থানায় গিয়ে তাকে নিয়ে নাটোরে ফিরি। ৯৯৯ নম্বর থেকে যে উপকারটা পেলাম, তা আমি কখনো ভুলব না। ঘটনাটি সুরাইয়ার মা–বাবাকেও জানানো হয়েছে। তাঁরাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।’

%d bloggers like this: