দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নাম ভাঙিয়ে ‘সামারি বাণিজ্যে’ সক্রিয় একটি সিন্ডিকেট। এই চক্রে সংস্থাটির কতিপয় অসাধু কর্মচারীরা জড়িত। তাদের সহযোগী হিসেবে আছে পেশাদার প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এদের কেউ কেউ বিভিন্ন সংস্থা থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
সংঘবদ্ধ এই চক্রের সদস্যরা শুরুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য সংগ্রহ করে। এরপর দুদক কর্মকর্তাদের সই জাল করে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানের ভুয়া নোটিশ তৈরি করা হয়। ওই নোটিশ পাঠানোর পর তা নিষ্পত্তি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
দুদক মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হকের পিএ গৌতম ভট্টাচার্য ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা।
জানা গেছে, শুক্রবার উত্তরার এক ব্যবসায়ীকে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে দেড় লাখ টাকা ঘুস নেওয়ার সময় মতিঝিলের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে গৌতমসহ চারজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেফতার অন্য তিনজন হলেন- মো. এসকেন আলী খান, হাবিবুর রহমান ও পরিতোষ মন্ডল। এই চক্রে জড়িত অন্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে এই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়ে তাদের আদালতে পাঠালে শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে দুদকের নামে চাঁদাবাজি সম্পর্কে জানাতে শনিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে ডিবি। সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, গ্রেফতার গৌতম ভট্টাচার্যের বাড়ি মৌলভীবাজার। তিনি দুদকের মহাপরিচালকের (মানিলন্ডারিং) পিএ হিসেবে কর্মরত। আর এসকেন আলী খান চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ। অপর দুইজনও গোপালগঞ্জের বাসিন্দা। তারা পেশাদার দালাল ও প্রতারক।
গৌতম সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি দুদকের বিভিন্ন মহাপরিচালকদের পিএ হিসেবে কাজ করে আসছেন। এর আগে তিনি সংস্থার মহাপরিচালক (তদন্ত), মহাপরিচালক (প্রশাসন), মহাপরিচালকের (প্রসিকিউশন) ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হিসেবে কাজ করেছেন। এ কারণে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান, নথিপত্র তলব, অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সবকিছু তিনি ওয়াকিবহাল। অফিসিয়াল প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তিনি টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের নামে কর্মকর্তাদের সই জাল করে ভুয়া নোটিশ তৈরি করতেন। তার চক্রের সহযোগীদের দুদক কর্মচারী পরিচয়ে সংস্থার মনোগ্রাম সংবলিত অফিসিয়াল খামে ভরে ওই চিঠি পাঠানো হতো। পরবর্তীতে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে কিংবা বিভিন্ন জায়গায় ডেকে অভিযোগ নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্র। এদের সঙ্গে দুদক কার্যালয়ের দায়িত্বশীল আরও কেউ জড়িত আছে কিনা- তা জানার চেষ্টা করছে ডিবি।